ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রাখাইনকে সেনামুক্ত রাখতে চাচ্ছেন সু চি!

susiডেস্ক নিউজ :

রাখাইনের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সেখানকার ত্রাণ কার্যক্রমসহ অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স ও গার্ডিয়ানের শনিবারের পৃথক দুই প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সু চি নিজেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রভাগে থেকে রাখাইনের সংকট উত্তরণে একটি বেসামরিক সংস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এদিকে বিশেষজ্ঞরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওই উপদেষ্টা সু চির খুবই ঘনিষ্ঠ।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইএমও) সবশেষ হিসাব অনুযায়ী রাখাইনের সহিংসতা থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সু চি প্রতিশ্রুতি দেন, রাখাইনের উত্তেজনা নিরসনের করণীয় নির্ধারণে তিনি মানবিক সহায়তা সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাবেন। তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আমন্ত্রিতদের সমন্বয়ে একটি বেসামরিক নেতৃত্বের সংস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন সু চি। বেশ কিছুদিন আগেই এ পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।

‘তার একটাই চিন্তা। কেমন করে এই সংকট দূর করা যায়। কেমন করে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম, সমন্বয় আর পুনর্নির্মাণের ক্ষমতা বেসামরিক সরকারের হাতে দেওয়া যায়’Ñ সু চিকে নিয়ে টেলিফোনে সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তার ওই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। তিনি জানান, সু চি নিজেকে ওই কাজেই নিয়োজিত রেখেছেন। ওই উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সংস্থাটি এক ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী ইউনিট হতে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতাকে সামনে আনবে।
গার্ডিয়ান ওই উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে আরও লিখেছে, সু চি মানবিক সহায়তার নৈতিক উপযোগিতা বুঝেছেন। নিজেকেই তিনি সামনে এনেছেন। বলেছেন, ‘আমিই দায়িত্ব নেব।’ তিনি সেই মানুষ, যিনি তার গোটা জীবনটাকেই মানবাধিকারের পক্ষে নিবেদন করেছেন। তিনি বদলে যাননি, তবে সংকট নিয়ে কথা বলার চেয়ে তা সমাধানেই তিনি বেশি মনোযোগীÑ বলেন সু চির সেই ঘনিষ্ঠজন।
সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন প্রশ্নে তিনি নীরব থাকায় প্রচ- সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে তার ঘনিষ্ঠ উপদষ্টো বলেছেন, তিনি একটি যথাযথ রাস্তা খুঁজছিলেন। কারণ শঙ্কা ছিল, সেনাবাহিনী তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। যেটা তার কাছে পরিষ্কার ছিল না, সেটা হলো কী করে তিনি এটা করবেন। কী করে তিনি বেসামরিক সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা তুলে দেবেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, সু চির সঙ্গে ওই উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে সু চির অন্য কোনো প্রতিনিধির কাছে থেকে কোনো তথ্য পায়নি তারা। তবে দুজন বিশেষজ্ঞ দুজনের ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারটি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শুক্রবার ওই উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, এ সংকট উত্তরণে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা যথেষ্ট পরিমাণে প্রত্যয়ী। শুক্রবার রয়টার্সকে ওই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সু চি চান না পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হোক। সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চান।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে ৬ জন কূটনীতিকের দাবির বরাত দিয়ে শুক্রবার জানিয়েছে, সু চি রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, আর রাখাইন হত্যাকা-ের মূল ক্রীড়নক সেনাপ্রধান মিন অং। সু চিকে মিয়ানমারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে মনে করা হলেও তিনি আসলে সেখানকার সামরিক বাহিনীর কাছে ‘অসহায়’। রোহিঙ্গা সংকটে সু চির হৃদয় ভেঙে পড়েছে বলে তার উপদেষ্টাও রয়টার্সের কাছে একই দিনে দাবি করেছেন। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে সু চির রোহিঙ্গা ভীতির কথা উঠে আসে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধান বলছে, সু চি সরকারে এসে আরও বেশি করে সেনাক্ষমতার হাতে বন্দি হয়ে পড়েছেন। ‘এশিয়ার ম্যান্ডেলা’খ্যাত এ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর ক্ষমতাহীনতাকে সেনাবাহিনী ও তার মধ্যকার স্বার্থগত বন্ধন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

পাঠকের মতামত: